‘২৪’-এর ভোট, ‘২৬’-এর জোট
সমরেন্দ্র মিত্র
প্রথমে পাটনা, পরে বেঙ্গালুরু। ২৬ দলের নতুন জোট। অস্তমিত হলো সাবেক ‘ইউপিএ’। জন্ম হলো ‘আই এন ডি আই এ’ বিরোধীদের নবজোট ‘ইন্ডিয়া’। বৈঠক হয়েছে দু-দুটি। নেতা-নেত্রীদের ‘ভার’ আছে। রয়েছে ধোঁয়াশাও। ‘ধাঁর’ কতটা সময় বলবে। বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ। আলোচনা গঠনমূলক। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাও স্থির হয়েছে। জোটের কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য ‘১১’ জনের একটি কোর কমিটিও গঠন করা হবে। ‘সিএমপি’ অর্থাৎ কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম এর কর্মসূচির খসড়াও তৈরি হবে। জোটের কেন্দ্রীয় সচিবালয় রাজধানী দিল্লিতেই হবে বলেই প্রাথমিক পর্যায়ে স্থির হয়েছে।
ভারতের সংবিধানের মূল স্তম্ভ —– ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। বিরোধীদের মতে, দেশের সাধারণ মানুষ এখন সংকটের মুখে। বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি চরমে পৌঁছেছে। তৃণমূল সুপ্রিমোর মতে— ‘দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশের সংবিধানকে বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে। সওদাগিরি করছে বিজেপি। কিছু মানুষের সম্পদ বাড়াচ্ছে। আপামর সাধারণ মানুষ ক্রমান্বয়ে গরিব হচ্ছে। দেশের জন্য বিকল্প রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এজেন্ডা প্রবর্তিত করাই মূল লক্ষ্য বিরোধী জোটের।
ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কতটা ভালো? রাজনীতি তো ভাব-ভালোবাসার সাহিত্য বা প্রেম-প্রীতির উপন্যাস নয়। চরমতম বাস্তব। জোর যার মুলুক তার। কেউ কেউ মনে করেন, ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ লড়াই’, যেখানে ক্ষমতা দখলের লড়াই, হার-জিতের হিসেব-নিকেশ সেখানে ‘সৌহার্দ্য’ শব্দটাই অর্থহীন। আলাপ-আলোচনা চলবে। দাফায় দাফায় সমঝোতার চেষ্টা হবে। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যথেষ্ট কষ্টকর হবে। সময় যত গড়াবে, বিরোধী জোটের রাজনৈতিক দলগুলির চেহারা ক্রমশ সুস্পষ্ট হবে। ‘আসন ভাগাভাগি’ যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, সেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা দূর-অস্ত। কোনও রাজনৈতিক দলই ‘নিঃস্বার্থ’ সেবা করে দেশ ‘উদ্ধার’ করার মতো মহানুভব মানসিকতা নিয়ে আসে নি।ক্ষমতা দখলের জন্য জাল-জালিয়াতি থেকে দুর্নীতি করতে কোন রাজনৈতিক দলই পিছপা হয় না। অনেক কিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এরাজ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম —- তিন দলই তাদের ক্যারিশমা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কার প্রাধান্য বেশি সেটাও অজানা নয়। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও বোঝাপড়া থাকলেও রাজ্যস্তরে কতটা মান্যতা পাবে —– তা বলা মুশকিল। এ রাজ্যে ‘মমতা ব্যানার্জি’ই ভোট ভরসা। তিনিই ‘মুখ’। এখনও রাজ্যের মানুষ তাঁকেই মান্যতা দেয়। এরাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএমের ভবিষ্যত তাই খুবই সন্দিহান।


Users Today : 0
Users Last 30 days : 142
Total Users : 2474
Views Today :